ইকটোপিক পেগন্যান্সি

ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর তা জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভ্রুণের বিকাশ লাভ করে। কিন্তু দুই শতাংশ ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া জরায়ুর বাইরে হয়। ডিম্বনালি, ডিম্বাশয় কিংবা জরায়ুর আশপাশে কখনও গর্ভসঞ্চার হলে তাকে ডাক্তারী ভাষায় একটোপিক প্রেগন্যান্সি বলা হয়। এই একটোপিক প্রেগন্যান্সির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হঠাৎ ডিম্বনালি ফেটে গিয়ে পেটের ভেতরে তীব্র রক্তক্ষরণ হতে পারে এমনকি মায়ের মৃত্যুও ঘটতে পারে।

দ্রুতই একটোপিক প্রেগন্যান্সি নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা করা না হলে মায়ের মৃত্যু ঘটতে পারে। একটেপিক পেগন্যান্সি  কেন হয় তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা খুব কঠিন, তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। যেমন ডিম্বনালির মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে  একটোপিক প্রেগন্যান্সি হতে পারে। কোনো নারীর পুর্বে একটোপিক প্রেগন্যান্সি হলে তা ভবিষ্যতেও হওয়ার আশংকা থাকে। কখনও ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত করলেও  একটোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়ার আশংকা থাকে। এন্ডোমেট্রিওসিস, বিভিন্ন সংক্রমণ, ধূমপান কিংবা গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণের কারণে এ ধরনের অস্বাভাবিক গর্ভসঞ্চারের ঘটনা ঘটতে পারে।

কখন একটোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বেশী?

  • গর্ভবতী মায়ের বয়স ৩৫ বছরের অধিক হলে
  • একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে
  • ডিম্বনালিতে কখনও অস্ত্রোপচার করা হলে
  • এপেনডিসেকটোমির মতো পেটে অন্য কোনো অপারেশন হলে
  • দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ্যাত্ব থাকলে

একটোপিক প্রেগন্যান্সির লক্ষণসমূহ

স্বাভাবিক গর্ভধারণের মত বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ একটোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রেও ঘটে। মাসিক বন্ধ-হওয়া, ক্লান্তিবোধ বৃদ্ধি পাওয়া, বমি-বমি ভাব কিংবা বমি, স্তনে ব্যথা এবং কোমলতা বৃদ্ধি, তলপেট ভারী-হওয়া, বারবার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় থাকে এবং একটোপিক প্রেগন্যান্সিতেও এসব লক্ষণ দেখা যায়। তাই বাসায় বসে একটোপিক প্রেগন্যান্সি নির্ণয় করা খুব কঠিন।

কোনো গর্ভবতী মহিলার তলপেটে তীব্র ব্যথা; সেই সঙ্গে যোনিপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে একটোপিক প্রেগন্যান্সির কথা মাথায় রাখা উচিত। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হলে একটোপিক প্রেগন্যান্সি ধরা পড়ে। ডিম্বনালিতে ভ্রুণের হৃৎস্পন্দন পাওয়া গেলে রোগ নির্ণয় করা যায়, একটোপিক প্রেগন্যান্সিতে শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষেত্রে ডিম্বনালিতেই গর্ভসঞ্চার ঘটে। অনেক ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেও ভ্রুণের সঠিক অবস্থা নির্ণয় সম্ভব হয় না তখন অপারেশন করে তা উদ্ঘাটন করা হয়।

একটোপিক প্রেগন্যান্সির চিকিৎসা

গর্ভাবস্থার প্রথমদিকে একটোপিক প্রেগন্যান্সি প্রয়োজন হলে মিথোট্রিক্সেট নামক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। মিথোট্রিক্সেট দিলে গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট হয়ে মাসিকের সঙ্গে বের হয়ে যায় কিংবা শরীরের ভেতরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থেকে যায়। তবে লিভার, কিডনি কিংবা রক্তে কোন সমস্যা থাকলে অথবা ভ্রুণ ৩.৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় হয়ে গেলে মিথোট্রিক্সেট দেয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার হতে পারে। তবে অনেকসময় মিথোট্রিক্সেট দিয়েও কাজ হয় না এবং জটিলতা থেকে যেতে পারে তখন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। একটোপিক প্রেগন্যান্সি জটিল আকার ধারণ করলে অপারেশনের সাহায্যে ডিম্বনালি ঠিক করা হয় অথবা ডিম্বনালি কেটে ফেলতে হয়। জটিলতার কারনে অনেকসময় জরায়ুও কেটে ফেলতে হয়। দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিলে জটিলতা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।

একটোপিক প্রেগন্যান্সি প্রতিরোধ

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণরুপে পরিহার করা
  • একের অধিক যৌনসঙ্গী না থাকা
  • তলপেটের বিভিন্ন সংক্রমণ অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে তা সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া উচিত।
  • অধিক বয়সে সন্তান নেয়া উচিত নয়। এর ফলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভপাত (এমআর বা ডিঅ্যান্ডসি) করানো হলে এ-অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে।
  • গর্ভাবস্থার পুর্বে কিংবা গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করা
  • যে কোনো অপারেশন দক্ষ চিকিৎসকের মাধ্যমে করানো উচিত।
  • গর্ভাবস্থার প্রথমদিকেই অবশ্যই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো উচিত। তাহলে সহজে এ অবস্থা শনাক্ত করা যায়।