গর্ভবস্থায় ব্যায়াম

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনের পরিপূর্ণতা নিয়ে আসে। তাই এসময় আপনাকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া এবং মানসিক ভাবে প্রফুল্ল থাকতে হবে। এজন্য নিয়ম মেনে হালকা ব্যায়াম আপনার নিজের এবং অনাগত সন্তান দুজনের জন্যই বেশ উপকারী।

গর্ভাবস্থায় যেসব হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে

হাঁটাহাটি- পুরো গর্ভকালীন সময়েই হাঁটাহাঁটি করা যায়। হাঁটাহাঁটি গর্ভকালীন সময়ের সবচেয়ে নিরাপদ ব্যায়াম। গর্ভাবস্থার পুরো ৯ মাস আপনি হাঁটাহাটিকে আপনার প্রতিদিনের রুটিন করে নিতে পারেন। সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন। আর আপনি চাইলে দিনে ১৫ মিনিটের মতো জগিংও করতে পারেন। ক্লান্ত হয়ে গেলে ধীরে ধীরে হাঁটুন।

সাঁতার কাটা- সাঁতার কাটাও গর্ভকালীন সময়ের জন্য অনেক ভালো ও নিরাপদ ব্যায়াম। সাঁতার কাটলে হাত এবং পায়ের মাসলের ব্যায়াম হয়। সাঁতার কাটার সময় শরীরে বাড়তি ওজন থেকেও নিজেকে হালকা মনে হয় এবং রিলাক্সড লাগে।

যোগব্যায়াম- গর্ভকালীন সময়ের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী কিছু যোগব্যায়াম রয়েছে যা শরীরের ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে মনকে প্রফুল্ল রাখে। মাসলের গঠন ভালো রাখতে সাহায্য করে। জয়েন্টের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে না করেই শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়ায়।

গর্ভাবস্থার সাধারণত চিকিৎসকেরা সোজা বা চিৎ হয়ে শুতে হয় এরকম ব্যায়াম করতে নিষেধ করেন। এমন ব্যায়াম থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন যেখানে লাফাতে হয় কিংবা পেটে কোন রকম চাপ লাগে। ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। তবে সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা/ব্যায়াম কেন করবেন ? 

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।  শরীরের বাহ্যিক পরিবর্তন এবং ফিটনেসের সমস্যা অনেক নারীকে দুঃচিন্তায় ফেলে দেয়। এজন্য মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকে। তবে সঠিক ওয়ার্কআউট/শরীর চর্চা আপনাকে এই ধরনের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে। ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়াম গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ভীষণ উপকারী। এরকম বেশ কিছু উপকারী দিক আছে যা একজন গর্ভবতী নারীকে এই সময় ব্যায়াম করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

স্বাভাবিক প্রসবঃ সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের জন্য আপনার শরীর ফিট থাকা খুবই প্রয়োজন। প্রসবের সময় অনেক শক্তি, সহনশীলতা, শারীরিক ক্ষমতার প্রয়োজন হয়। আর পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম আপনাকে এই সময়ে অনেকাংশে সাহায্য করবে।

ওজনের সমস্যার সমাধানঃ গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন হরমোনাল প্রক্রিয়ায় প্রভাবে শরীরে বাড়তি ওজন তৈরী হয়। প্রতিদিনের সামান্য ব্যায়াম আপনাকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান রাখবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করবে।

মর্নিং সিকনেস নিয়ন্ত্রনে রাখতে: অনেক গর্ভবতী মহিলা, বিশেষ করে প্রথমবার সন্তান জন্ম দিচ্ছেন এমন মহিলারা মর্নিং সিকনেসের সমস্যায় ভুগেন। এসময় গর্ভবতী মহিলাদের  বেশী বেশী বমি হয় এবং শরীর অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। খাবারে রুচি কমে যায়। নিয়মিত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে: গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি এবং শেষের দিকে অনেক গর্ভবতী মহিলারই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। একজন গর্ভবতী মহিলা যদি দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, তাহলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

গর্ভস্থ শিশুর রক্ত সঞ্চালন, হার্ট ও মস্তিস্ক বিকাশে:  গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত ব্যায়ামে গর্ভস্থ শিশুর রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। হার্টের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়ামের কারণে সন্তানের মস্তিস্ক  অনেক উন্নত এবং স্মৃতি প্রখর হয়।

অবসাদ থেকে মুক্তিঃ গর্ভাবস্থায় অবসাদ কিংবা দুশ্চিন্তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এবং এই অবসাদের প্রভাব গিয়ে পড়ে গর্ভস্থ সন্তানের উপর। তাই নিজেকে অবসাদ/স্ট্রেস থেকে মুক্ত রাখতে ব্যায়াম অনেক ভুমিকা রাখতে পারে। এছাড়া দৈনিক ৩০ মিনিটের হাঁটাহাঁটি ডায়াবেটিসউচ্চ রক্তচাপ থেকেও দূর রাখে ও দেহের সঠিক মেটাবলিজমে সাহায্য করে।

ঘুমের সমস্যা দুরীকরণে: গর্ভাবস্থায় ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় এবং এর ফলে অস্থিরতা, অবসাদ বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: নিয়মিত ব্যায়ামে যখন দেখবেন গর্ভাবস্থার এই সময়ও আপনি স্বাস্থ্যবান আছেন, ফিট আছেন এবং সুস্থ আছেন; তখন আপনার আত্মবিশ্বাস এমনিতেই অনেক বেড়ে যাবে।

ফিটনেস দ্রুত ফিরে আনা:  সন্তান প্রসবের আগেই অর্থাৎ গর্ভাবস্থার সময় থেকেই যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাহলে বাড়তি ওজন ঝরিয়ে আপনি খুব দ্রুতই ফিটনেট ফিরে পাবেন।

শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে তোলা: শরীরচর্চায় ঊরু, পিঠ এবং শরীরের নিম্নাংশের মাসল টোন করে যা প্রসবের সময় প্রসব বেদনা কমাতে সাহায্য করে। শরীরকে প্রসবের জন্য উপযুক্ত করে এবং স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে।

যে অবস্থায় ব্যায়াম করতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত:

  • গর্ভবতী নারীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।
  • রক্তশূন্যতা কিংবা অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভুগলে।
  • যাদের হূৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের কোন রোগ রয়েছে।
  • গর্ভাবস্থায় কখনও রক্তক্ষরণ হলে।
  • গর্ভফুল নিচের দিকে থাকলে কিংবা প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে।
  • পুর্বে গর্ভপাত হওয়ার কোন ইতিহাস থাকলে।

যদি গর্ভবতী মায়ের কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে সহজেই হালকা কিছু ব্যায়াম করতে পারবে। যদিও গর্ভাবস্থায় কোন ভারি কাজ করা সম্পুর্ন নিষেধ তবে হালকা ব্যায়াম এই সময় বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।