গর্ভধারণের লক্ষণ

গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ

কিছু উপসর্গের ভিত্তিতে আপনি গর্ভবতী কিনা তা নির্ণয় করতে পারবেন। সাধারণত মাসিক বন্ধ হওয়ার ১ বা ২ সপ্তাহ পর কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হয়ে উঠে এবং তা প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যায়। আপনার যদি মাসিকের হিসাব না থাকে অথবা আপনার মাসিক যদি অনিয়মিত হয়, তহলে আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন না কখন মাসিক হবে বা হওয়া উচিত ছিল। আপনি হয়তো সময়মতো মাসিক না হবার কারণে চিন্তিত। কিন্ত যদি আপনি নিচের কোন একটি উপসর্গ দেখতে পান, তবে খুব সম্ভবত আপনি গর্ভধারন করেছেন। নিশ্চিত হতে নিচের উপসর্গগুলো নিজের সাথে মিলিয়ে নিন এবং বাসায় বসেই একটা প্রেগনেন্সি টেস্ট করে ফেলুন।

গর্ভবস্থার প্রথম দিকে খাবারে অনীহা বোধ হওয়া বেশ স্বাভাবিক। যদি কোন খাদ্যদ্রব্যের গন্ধ আপনার মাঝে বমি ভাব নিয়ে আসে তবে খেয়াল করুন এমনটা ক্রমাগত হচ্ছে কি না। তাহলে খুব সম্ভবত আপনার শরীরে ক্রমবর্ধমান ইস্ট্রোজেন হরমোনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া। এসময় আপনার খুব পছন্দের কোন খাবারে অনিহা হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

খাবারে অনীহা

এসময় সাধারনত মন মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। এরকম মুড সুইংয়ের কারণ অনেকগুলো হতে পারে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ব্রেনের অভ্যন্তরে বার্তা বহনকারী নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমানে পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন বিভিন্ন জনে বিভিন্নরকম হতে পারে। গর্ভবতী মা এসময় বেশ আবেগী কিংবা বিষন্নতায় ভোগেন।

মন মেজাজের পরিবর্তন

হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের পেট ফুলে যায়। এটা অনেকটা মাসিক হবার পুর্ব মুহুর্তের অনুভুতির মত হতে পারে। এসময় আপনার মনে হতে পারে যে, আপনার পরিধেয় কাপড়গুলো কোমরের কাছে একটু টাইট হয়ে গেছে, যদিও প্রথম দিকে আপনার জরায়ুতে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসে না তবুও এরকম হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

পেট ফুলে উঠা

হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে এরসময় শরীরে যেসব পরিবর্তন আসে তার একটি হল রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়া। রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ঘন ঘন আপনার প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। এই উপসর্গ প্রথম ট্রিমেস্টার থেকেই দেখা যেতে পারে। যা গর্ভকালীন শেষ সপ্তাহ অর্থাৎ আপনার শরীরে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব

প্রোজেস্ট্রেরন হরমোনের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ আপনাকে ক্লান্তি বোধ করাতে পারে। এছাড়াও মর্নিং সিকনেস অথবা ঘন ঘন প্রস্রাব করাও আপনার ক্লান্তিবোধ বাড়াতে পারে। তবে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার শুরুর দিকে আপনার এই ক্লান্তিবোধ অনেকটাই কেটে যাবে। অবশ্য গর্ভাবস্থার শেষ দিকে কিছু উপসর্গের কারনে আবার এই ক্লান্তিবোধ ফিরে আসতে পারে।

অবসন্ন বোধ করা

গর্ভধারণের পর শরীরে বিশেষ কিছু হরমোন ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে আপনার স্তন বেশ স্পর্শকাতর হয়ে পড়তে পারে, যা কি না গর্ভধারণের একটি অন্যতম লক্ষন। আপনার স্তনের এই ফুলে যাওয়া কিংবা ব্যাথা অনেকটা মাসিক পূর্ববর্তী অবস্থায় মতই মনে হতে পারে। তবে এই ব্যাথা সাধারনত প্রথম ট্রাইমেস্টারের শেষ দিকেই কমে যেতে পারে।

স্তনে পরিবর্তন

সাধারণত গর্ভধারণের এক মাসের আগে কোন বমি বমি ভাব দেখা দেয় না তবে ব্যতিক্রম হতে পারে। গর্ভধারণের ৫-৭ সপ্তাহের দিকে বমি বমি ভাব হতে পারে। প্রায় অর্ধেকের মতো গর্ভবতী নারী তাদের দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের শুরুর দিকে এই বমিভাব থেকে মুক্তি পায়, আর বাকিদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও মাসখানেক থাকতে পারে।

বমি বমি ভাব

আপনার মাসিক যদি সঠিক নিয়ম মেনে হয় এবং তা যদি কখনও বন্ধ হয়ে যায়, তবে অন্য উপসর্গগুলো দেখা না গেলেও আপনি বাসায় বসেই একটা প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। তবে আপনার মাসিক যদি অনিয়মিত হয়ে থাকে এবং আপনি যদি এর হিসাব ঠিকমতো না রাখতে পারেন, তবে অন্য লক্ষনগুলো ভাল করে দিকে খেয়াল করুন।

মাসিক মিস হওয়া

সাধারনত গর্ভবস্থায় গর্ভবতী মহিলার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। আপনি যদি নিয়মিত আপনার শরীরের তাপমাত্রার হিসাব রেখে থাকেন, এবং দেখেন একনাগাড়ে ১৮ দিনের বেশি আপনার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তবে খুব সম্ভবত আপনি গর্ভধারন করেছেন। তাই নিশ্চিত হতে বাসায় বসে টেস্টিং কিট দিয়ে টেস্ট করুন।

শারীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি