সপ্তাহ – ১০

এক এক করে আপনি এরই মধ্যে নয়টি সপ্তাহ পার করে ফেলেছেন। প্রেগন্যান্সির ১০ম সপ্তাহে আপনাকে স্বাগতম! গর্ভবতী বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বড়সড় পেটের হবু মা। এই শুরুর দিককার সময়ে যেহেতু এখনো পেট তেমন বড় হয়ে ওঠে নি, আপনার মনে হতেই পারে, আসলেই কি আপনি প্রেগন্যান্ট! অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন ইতিমধ্যেই আপনি বুঝতে শুরু করেছেন। বাকি পরিবর্তনগুলো হচ্ছে খুব দ্রুত।

দশম সপ্তাহে ভ্রূণের ডেভেলপমেন্ট

দশম সপ্তাহে ভ্রূণটি ১.২ ইঞ্চি লম্বা, যেটি ওজন করলে ০.১৪ আউন্সের কাছাকাছি হবে। এর আকার এখন একটা স্ট্রবেরির সমান। পরের সপ্তাহগুলোতে এই আকার বাড়বে খুব দ্রুত। এই সময়ে বাচ্চার দেহের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গড়ে উঠেছে এবং কাজ করা শুরু করেছে। চিবুকের গঠন শুরু হয়েছে। এমনকি দুধ দাঁতও তৈরী হচ্ছে, কিন্তু সেটা মাড়ির ভেতরেই থাকবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মের ছয় মাস পরে, এই দাঁত মাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।

হাতের আঙ্গুল আর মাথার চুল দৃশ্যমান হওয়া শুরু হয়েছে। হাঁটু আর পায়ের পাতা ধীরে ধীরে আকৃতি নিচ্ছে। বাহু আকার পেয়ে আস্তে আস্তে শক্ত হচ্ছে, কনুই কাজ করা শুরু করেছে। পাকস্থলী পরিপাক রস তৈরী করছে আর কিডনী প্রস্রাব উৎপাদন করছে।

এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন

ভ্রূণটি আকারে বড় হচ্ছে। আর এই বাড়ন্ত ভ্রূণটিকে  জায়গা করে দিতে পেটের মাংশপেশী আর লিগামেন্ট প্রসারিত হতে শুরু করেছে। এই সময়কার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো:

  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ (Vaginal Discharge)
  • তলপেটের মাংসপেশীতে ব্যাথা (রাউন্ড লিগামেন্ট পেইন)
  • ক্লান্তিবোধ, খাবারে অনীহা/ অধিক আগ্রহ
  • মর্নিং সিকনেস বা মাথা ঘুরানো ও বমিভাব
  • গ্যাসের সমস্যা ও মেজাজের উঠানামা

প্রথম থেকে দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে প্রবেশ করলেই মর্নিং সিকনেস চলে যাবে আশা করা যায়। স্বাভাবিক ক্লান্তিবোধ বাড়িয়ে দিতে পারে মর্নিং সিকনেস। হালকা ব্যায়ামে ভালো অনুভব করতে পারেন। সাদাস্রাব (White Discharge) যেটা স্বাভাবিক সময়ের চাইতে পরিমানে বেশী হতে পারে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের করে দেবার জন্য এর দরকার আছে। তবে এই ডিসচার্জের রঙ লাল হলে, দূর্গন্ধযুক্ত হলে কিংবা যদি এর সাথে শারীরিক অস্বস্থি জড়িত থাকে, ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

এই সপ্তাহে কয়েক পাউন্ড ওজন বাড়া স্বাভাবিক। অনেক ডাক্তাররা বলেন, গড় বি এম আই (BMI) এর মেয়েদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ পাউন্ড বাড়তে পারে। তবে যমজ বাচ্চা হলে এই বৃদ্ধির পরিমানও কিছু বেশী হবে। মর্নিং সিকনেস আর খাওয়ার অরুচি থেকে যেসব মায়ের ওজন কমেছে, তারা দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে মর্নিং সিকনেস কমে গেলে, ওজন বাড়বে বলে আশা করতে পারেন।

এই সময়ে শিরা-উপশিরা চামড়ার উপরে দৃশ্যমান হতে পারে।

এই সপ্তাহে আপনার করনীয় কি?

  • প্রথম ট্রাইমিস্টারে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য খুবই কমন। প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, তাজা ফলমূল, শাকসবজির পরিমান বাড়িয়ে দিন। প্রচুর পরিমান পানি খান। হাতের নাগালে পানির বোতল রাখুন। ইসবগুলের ভুষি নিয়মিত খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না। সাধারন জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাধরা, যেগুলোর জন্য ওষুধ আপনি আগে নিজেই খেয়ে নিতেন, এখন ভুলক্রমেও ডাক্তারের সাথে কথা না বলে খাবেন না।
  • বাচ্চার দাঁত আর হাড়ের গঠন যেহেতু শুরু হয়েছে, আপনার শরীরে ভিটামিন-ডি পর্যাপ্ত পরিমানে থাকতে হবে। আপনি যদি ইতোমধ্যে মাল্টিভিটামিন খাওয়া শুরু করে থাকেন (যাতে প্রেগন্যান্সিতে প্রযোজনীয় সব ভিটামিন একসাথে থাকে), তবে আলাদা ভিটামিন ডি’র দরকার নেই। নইলে ডাক্তারের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে নিন।
  • প্রতিদিনের খাবারের তালিকার ডিম এবং দুধ অবশ্যই রাখুন। সরাসরি খেতে অনীহা হলে, ডিম/দুধের তৈরী বিকল্প খাবার খান।
  • অধিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ এড়ানোর জন্য প্যান্টি লাইনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে বারবার আন্ডারওয়ার বদলানোর ঝামেলা এড়াতে পারবেন। দরকার মতো শুধু লাইনারটা বদলে নিলেই হবে।
  • গ্যাসের সমস্যা এড়ানোর জন্য পেট কখনো খালি রাখবেন না। এছাড়া গ্যাস উদ্রেককারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন। হালকা ব্যায়াম করুন। বাসায় বা জিমে, নতুন যেকোন ব্যায়াম করতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • বমি ভাব থাকলে আদার টুকরা রাখুন সাথে। আদা আছে, এমন ক্যান্ডি বা পানীয় খেতে পারেন।
  • হজমে সমস্যা থাকলে কখনোই শুয়ে খাবার খাবেন না। এবং খাওয়ার পর সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না।
  • মুড সুইংয়ের জন্য হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। নেতিবাচক ভাবনা এবং সংগ থেকে দূরে থাকুন। ভবিষ্যতে বাচ্চার সাথে সুন্দর সময় কাটানোর পরিকল্পনা করুন।

আপনার মন্তব্য