সপ্তাহ – ১১

আপনি কি জানেন এখন আপনার শিশু পানির নীচে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে? হ্যাঁ এই সপ্তাহগুলিতে আপনার ভ্রূণ অল্প পরিমাণে অ্যামনিয়োটিক তরল শ্বসন করতে শুরু করে যা আপনার শিশুর ফুসফুসের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়াও এই সপ্তাহগুলিতে আপনার শিশুর কানের পাতা তার মাথার পাশে গজিয়ে উঠছে। এই পর্যায়ে আপনার শিশুর পেশী তৈরী হতে শুরু করেছে এবং সে হাত পা ছুড়তে পারছে। আপনার শিশুর প্রতিক্রিয়া আন্দোলিত হতে শুরু করে এইসময়।

তাই আপনি যখন আপনার পেটের উপর হাত রাখবেন সে সম্ভবত নড়াচড়া করে উঠবে যদিও সেটা আপনি এতো তাড়াতাড়ি অনুভব করতে পারবেন না। এখন সে তার হাতের মুঠি খুলতে এবং বন্ধ করতে পারবে তার পায়ের আঙ্গুল ভাঁজ করতে পারবে এবং লাথি মারতে পারবে।

১১ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়? 

এই সপ্তাহে আপনার শিশুর বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান থাকে। আপনার ডাক্তার এখন একটি ডপলার স্টেথিস্কপ্ ব্যবহার করে আপনার শিশুর দ্রুত হৃদস্পন্দন শুনতে পারবেন। আপনার শিশুর লিঙ্গ গঠন এখনও হয়ে চলেছে কিন্তু আলট্রাসাউন্ডের দ্বারা এখন তা নির্ধারণ করা যাবে না। শিশুর শরীরের সব অঙ্গ ও শারীরিক কাঠামো ক্রমশঃ গঠিত হচ্ছে এবং অঙ্গসঞ্চালন শুরু হচ্ছে। তার দৈর্ঘ্য এখন প্রায় ২ ইঞ্চি এবং সে দীর্ঘশ্বাস নিতে পারে, শরীর প্রসারিত করতে পারেতার মাথা নাড়াতে পারে এবং তার বুড়ো আঙুল চুষতে পারছে।

এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন

  • এ সপ্তাহ নাগাদ আপনার স্তনের আকার বড় হতে শুরু করবে, সুতরাং অন্তর্বাস হতে হবে আরামদায়ক। যদি আপনার মুখে ব্রণ থাকে, তাহলে খেয়াল করবেন যে সেগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে।
  • এই আপনি খুশি থাকবেন তো পরের মুহুর্তেই আপনার প্রচন্ড মন খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু তা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই, গর্ভাবস্থায় এই অনুভূতিগুলো খুবই স্বাভাবিক আর সময়ের সাথে সাথে ঠিকও হয়ে যাবে।
  • গর্ভাবস্থায় মায়েদের কোষ্ঠ কাঠিন্য সমস্যাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে হয়ে থাকে যা হজম শক্তি কমিয়ে দেয়। এছাড়া বুক জ্বালা পোড়ার উপসর্গ ও দেখা দিতে পারে।
  • শরীরের metabolism বেড়ে যাওয়ার কারনে এসময় শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে শরীর গরম থাকতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় পা ফুলতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস সময়ে পা ফুলে গেছে কিনা দেখার জন্য উভয় গোড়ালির চারপাশে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিন৷ যে পয়েন্টে চাপ দেওয়া হয় সেখানে যদি একটি ছোট গর্ত হয়ে যায় এবং শীঘ্র তা মিলিয়ে যায় তবে বুঝতে হবে পায়ে পানি নেমেছে৷ শরীরে লবণ বৃদ্ধির ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় ও পানি জমে৷ শরীরে পানি জমলে বা শরীর ফুলে গেলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও ওজন দেখা উচিত৷

এই সপ্তাহে আপনার করনীয় কি?

গর্ভাবস্থার সময় আপনার হরমোনের ভাল এবং খারাপ দুটো প্রভাবই আপনি লক্ষ্য করতে পারবেন। যেমন আপনার চুল হাত এবং পায়ের আঙ্গুল দ্রুত বাড়তে থাকবে আবার অন্যদিকে আপনার ত্বক তৈলাক্ত এবং ব্রণ প্রবন হয়ে উঠতে পারে। এখন আপনার শরীরের বিস্তার আপনি ভিতরে এবং বাইরে দুদিকেই খেয়াল করতে পারেন। আগামী দশ সপ্তাহে আপনার এবং আপনার শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকবে।

আপনার এখন সবসময় নিজেকে খুব তৃষ্ণার্ত মনে হতে পারে কারণ আপনার শরীর এখন প্রচুর পরিমাণে রক্ত, ঘাম, তেল এবং অ্যামনিয়োটিক তরল উত্পাদন করবে। তাই আপনার শরীরে তরলের মাত্রা বজায় রাখার জন্য এখন আপনি যেখানেই যান না কেন আপনার সাথে একটি পানির বোতল বহন করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি ও দুধ পান করুন কিন্তু কার্বনেটেড পানীয় থেকে এখন নিজেকে দূরে রাখাই ভালো।

এই সপ্তাহে আপনার জন্য পরামর্শ:

গর্ভাবস্থার এই নয় মাসে অন্তত একবার আপনার ডেন্টিস্টের সাথে দেখা করুন। দৈনন্দিন ব্রাশ এবং ফ্লস করুন এবং আপনার দাঁত সুস্থ রাখার জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খান। আপনার গর্ভাবস্থার হরমোন এবং বর্ধিত রক্ত ​​ভলিউমের জন্য এখন আপনার মাড়ি থেকে রক্ত ​​ঝরতে পারে। যদি তা হয় তাহলে একটি নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করুন।

আপনার এবং আপনার ক্রমবর্ধমান শিশুর অপরিহার্য পুষ্টির জন্য এখন আপনাকে ফোলেট, ফাইবার এবং আয়রনযুক্ত খাবার যেমন পেয়াঁজকলি ইত্যাদি খেতে হবে। আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম সঠিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়াতে হলে আপনার ডুমুরজাতীয় খাদ্য খেতে হবে।

আপনার মন্তব্য