সপ্তাহ – ২

২য় সপ্তাহেও আপনার শরীরে কোন গর্ভসঞ্চার হয়নি। তবে এ সপ্তাহেই শরীরে ডিম্বাণু তৈরী হবে যা আপনার সঙ্গীর শুক্রাণুর সাথে যুক্ত হয়ে প্রানের সঞ্চার করবে। ডিম্বানু নিষিক্ত হয়ে জরায়ুর দেয়ালে বসবে এবং সেখানে ধীরে ধীরে কোষ বিভাজনের সাহায্যে আস্ত-মানব সন্তানের আদল তৈরী হবে।

এই সপ্তাহে (একটি ২৮ দিনের চক্রের ১৫তম দিন), আপনার ওভালুয়েশন হতে পারে ।  আপনি এখনি কিছুই বুঝতে পারবেন না, কিন্তু ডিম্বানু নিষিক্তের পর গর্ভস্থ ভ্রূণকোষটি ইতিমধ্যেই ছেলে না মেয়ে হবে তা নির্ধারন হয়ে গেছে। শুক্রানু X ক্রমোসোম ধারন করলে আপনার মেয়ে সন্তান হবে আর Y ক্রমোসোম হলে ছেলে সন্তান হবে।

ভ্রুণের জন্য এই ২য় সপ্তাহটি বেশ গুরুত্বপূর্ন। ভ্রুণ এ পর্যায়ে দুই ভাগে ভাগ হয়, ভিতরে ভ্রুন এবং বাইরে ইয়ক স্যাক (yolk sac) নামক একটি আবরন থাকে, মাঝের ফাঁকা জায়গাটিকে বলা হয় এমনিয়টিক গহ্বর। গর্ভফুল বা placentaপুরোপুরি গঠন না হওয়া পর্যন্ত ইয়ক স্যাক (yolk sac) বাচ্চার শরীরে পুষ্টির যোগান দেয় এবং তাকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। গর্ভফুল (placenta) কেবলমাত্র তৈরি হওয়া শুরু করেছে, এটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে আনুমানিক ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। গর্ভের ২ সপ্তাহে নাভিরজ্জুরও গঠন শুরু হয় এবং অল্প অল্প করে কাজ করতে থাকে।

এই সপ্তাহে কিছু বাহ্যিক পরিবর্তন লক্ষ করতে পারেন

আপনার গর্ভে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা শিশুটিকে সকল রকম সহযোগিতা দিতে আপনার শরীর তৈরী হচ্ছে। এসময় আপনি খানিকটা ক্লান্তি বোধ করতে পারেন, আপনার স্তনদ্বয় কিছুটা স্ফীত হতে পারে এবং সামান্য ব্যথা বোধ করতে পারেন। ২য় সপ্তাহের শেষ দিকে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসতে পারে এবং সাধারনত তা গর্ভের ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। ভ্রূণটি জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হওয়ার পর আপনার শরীর প্রচুর পরিমাণে Beta – hcG হরমোন নিঃসরণ শুরু হবে যার কারণে আপনার শরীরে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষনগুলো দেখা যাবে। এই হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন এর ক্ষরণের মাত্রা বৃদ্ধি করবে যা আপনার গর্ভাবস্থাকে সচল রাখার জন্য অপরিহার্য ।

  • কিছু কিছু মায়েরা গন্ধপ্রবন হয়ে উঠতে পারে।
  • Pelvic Region এ হালকা ব্যাথা অনুভব করতে পারেন।
  • সঙ্গীর প্রতি আকৃষ্টতা বৃদ্ধি পেতে পারেন।
  • শরীর এর তাপমাত্রা খানিকটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

এই সপ্তাহে যা করনীয়

বেশিরভাগ শিশু ডিম নিষিক্ত হওয়ার ৩৮ সপ্তাহ পর সন্তান জন্ম নেয়, কিন্তু সেই সঠিক সময় জানা খুব কঠিন, ডাক্তাররা সাধারনত আপনার শেষ মাসিকের প্রথম দিন থেকে ৪০ সপ্তাহ গণনা করে আপনার সন্তান জন্মদানের নির্ধারিত তারিখ হিসাব করে, যদি আপনার মাসিকের চক্রটি ২৮ দিনের হয়। যদি আপনার ছোট অথবা দীর্ঘ মাসিক চক্র থাকে তবে আল্ট্রাসাউন্ডের পর আপনার নির্ধারিত তারিখ জানা যেতে পারে ।

আপনার এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেয়া দরকার এবং মানসিক চাপ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা জরুরি।

আপনার কি ডায়াবেটিস অথবা রক্তে শর্করার মাত্রা বেশির মতো অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে? যদি থাকে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তা না হলে আপনার অনাগত শিশুর জন্য সেটা ক্ষতির কারন হতে পারে। সুতরাং একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।

আপনার মন্তব্য