সপ্তাহ – ৩

অভিনন্দন! এই সপ্তাহে আপনাকে গর্ভবতী বলা যায়। এ সময় শিশুর জীনগত গঠন (genetic makeup)  সম্পূর্ণ হয় এবং লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।  যদিও আপনি গর্ভবতী কিনা জানতে আরও ২-১ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতে পারে। গর্ভধারণ শুরুর তিন দিনের মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণু খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে বহুকোষে পরিণত হয়, একে কোষ বিভাজন বলা হয়। তা ফ্যালোপিয়ান টিউব (Fallopian tube) দিয়ে জরায়ুতে  গিয়ে পৌঁছায় এবং জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হয়। এ সময় ভ্রুণের পুষ্টি যোগান দেয়ার জন্য জরায়ুর অন্তরাচ্ছদক অঙ্গ গর্ভফুল বা Placenta এর গঠন শুরু হয়।

এই সময়ে আপনার গর্ভের বাচ্চাটির আকার ছোট একটা বলের সমান (Blastocyst)। এই ছোট বল যাকে কেন্দ্র করে কোষ বিভাজন শুরু হয়েছে, তার চারপাশে এমনিয়োটিক ফ্লুইড জমা হচ্ছে। একসময় তা এমনিয়োটিক স্যাকে পরিনত হবে। যা একটা পানির থলের মতো এবং এর ভিতরে আপনার গর্ভের শিশুটি বড় হতে থাকবে।

এ সপ্তাহে আপনার গর্ভের শিশুর আকার একটি পোস্তাদানার আকারের সমান।  আপনার শিশুটি যে এমনিয়োটিক ফ্লুইডের মধ্যে বড় হচ্ছে, সেই থলিটি আরও পুরু হবে এবং ভিতরের তরল পদার্থ আরও বৃদ্ধি পেয়ে ভ্রুনটিকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এই পর্যায়ে ভ্রূণটির তিনটি ‘জার্ম’ বা স্তর থাকে – এক্টোডার্ম, মেসোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম। এক্টোডার্ম থেকে শিশুর বহিঃত্বক এবং স্নায়ুতন্ত্র গঠন হবে। মেসোডার্ম কঙ্কাল, পেশী এবং হৃৎপিণ্ড গঠনে সহায়তা করবে এবং এন্ডোডার্ম ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গ গঠনে সাহায্য করবে ।

এসময় গর্ভাশয়ের এইচ.সি.জি. (Human chorionic gonadotropin)  হরমোন উৎপন্ন শুরু হয়, যা ডিম্বাণু থেকে ডিম ছাড়া বন্ধ করে দেয় এবং এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন বৃদ্ধি করে।

এ সময় হয়তবা আপনি গর্ভবতী হওয়ার কিছু কিছু লক্ষন  বুঝতে শুরু করবেন, যদিও অনেকের ক্ষেত্রে তা ৫ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যেমন:

  • স্তন নরম এবং স্ফীত বোধ হওয়া।
  •  ক্লান্তিবোধ হওয়া
  • ঘন ঘন প্রসাবের বেগ আসা
  • খাবারে অরুচি হওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
  • ব্লিডিং বা স্পটিং (কেউ কেউ প্রসাবের রাস্তায় হালকা স্পটিং অথবা লালচে কিংবা গোলাপী স্রাব খেয়াল করেন যেটা ঠিক মাসিক না কিন্ত যদি এর সাথে সাথে ব্যাথা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন কারন তা Ectopic pregnancy এর লক্ষনও হতে পারে।

এই সপ্তাহে যা করনীয়

আপনি গর্ভবতী ইতিমধ্যে জেনে গিয়ে থাকলে প্রথমেই ভালো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের খোজ করুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন গর্ভকালীন পুরোটা সময় এবং প্রসব পরবর্তী সময় আপনার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপর নির্ভর করতে হবে। এবং অন্য যে ডাক্তার এর কাছেই যাবেন তাকে গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে অবহিত করুন। যাতে এমন কোন ওষুধ না দেয় যা আপনার গর্ভধারণের জন্য নিরাপদ নয়।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক এসিড সমৃদ্ধ Pre-natal vitamin খেতে থাকুন।

এ সময় খাদ্যাভ্যাসের খানিকটা পরিবর্তন হওয়া দরকার এবং আপনার কি খেতে হবে সে ব্যাপারে বেশী সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যদি আপনি এখনও ভিটামিন শুরু না করেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সেটা শুরু করা উচিৎ , বিশেষ করে আপনি যদি নিরামিষভোজী হয়ে থাকেন। ফলিক অ্যাসিড একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যার অভাবে শিশুর স্নায়ুরজ্জু (spinal cord) ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, যাকে বলা হয় স্পাইনা বাইফাডা (spina bifida) । প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামও এক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ন। শিশুর হাড় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম আপনার শরীর থেকেই গ্রহন করবে, ফলে আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকা প্রয়োজন। বেশী করে ফুটানো দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার খাবেন কারন বাচ্চার শরীরের টিস্যু গঠনের জন্য প্রোটিন অনেক জরুরি। এই সময় আপনি অপুষ্টিতেও ভুগতে পারেন, সুতরাং খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে এখনই সচেতন হন এবং বাড়তি কিছুর প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শে সেটা গ্রহণ করুন।

আপনি এখনও নিশ্চিত না হলে কিংবা ফলাফল নেতিবাচক হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করুন।  আপনার মাসিক মিস করার ১-২ সপ্তাহ পরে  পরীক্ষা করলে টেস্টের সঠিক ফলাফল পেতে পারেন। তাই আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করুন, এবং যদি আপনি এখনও আপনার ফলাফল না পেয়ে থাকেন, তাহলে  আপনার ডাক্তারের সাথে  দেখা করুন।

আপনার মন্তব্য