৫ম সপ্তাহে আপনি গর্ভধারণের বেশ কিছু উপসর্গ সর্ম্পকে পরিচিত হতে থাকবেন। এই সপ্তাহে আপনার বাচ্চার হৃদপিন্ড, পাকস্থলি, লিঙ্গ এবং কিডনি গঠন হয়। ভ্রুন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ সপ্তাহের প্রথম দিকে ভ্রুন সাধারণত ১.০৫ মিলিমিটার অথবা .০৫ ইঞ্চি লম্বা হয়।
আপেল ফলের বীচির সমান আকৃতির গর্ভস্থ শিশুটিকে এখন দেখতে খানিকটা ব্যাঙ্গাচির মতো মনে হয় যার মধ্যভাগে একটা স্ফীত অংশ দেখা যায়, যা হৃদপিণ্ড। যদিও এখনো হৃদপিণ্ডের আলাদা প্রকোষ্ঠ গঠন হয়নি কিন্তু তার মধ্যেও প্রাণের স্পন্দন তৈরি হয়েছে এবং সে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তসঞ্চালন করে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে গর্ভের শিশুটির নিজস্ব কিছু রক্তনালীও গঠিত হয় এবং কিছু রক্তনালী মিলে একটি দড়ির (Strings) মত দেখতে কিছু একটা তৈরি করে যা কিছু দিন পর নাভিরুজ্জু বা Umbilical Cordএ পরিণত হয়ে শিশুটিকে প্লাসেন্টার সাথে সংযুক্ত করবে।
ইতি মধ্যেই গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা পুরোপুরি গঠিত হয়েছে এবং এর আঙ্গুলের মতো দেখতে অংশ যা Chorionic Villiনামে পরিচিত তা ভ্রূণের জন্য মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। দেহের অন্যান্য জরুরি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড অনেকাংশেই গঠিত হয়ে গেছে, তবে তা এখনো জোড়া লাগেনি। দেহের অন্যান্য অংশের চাইতে মাথা সবচেয়ে দ্রুত বিকশিত হয় কারণ তাকে খুব শীঘ্রই হৃদস্পন্দনের গতি, রক্ত সঞ্চালন আর জীবাণু সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করার পুরো দায়িত্ব গ্রহন করতে হবে।
শারীরিক পরিবর্তন
- বমি বমি ভাব বা morning sickness শুরু হতে পারে। কিছু খাবারের ক্ষেত্রে অনীহাও দেখা দিতে পারে।
- স্তনে নরম ভাব এবং nipple অনেকটাই সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। স্তন এর আঁকার বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ঘন ঘন প্রসাবের চাপ আসতে পারে।
- শরীর খানিকটা দুর্বল বা মাথা হালকা ঘুরতে পারে। অনেকক্ষেত্রে অনেক্ষন কিছু না খেলে তা বেশী হতে পারে।
- মেজাজের উঠানামা বা Mood Swing হতে পারে যেমন অকারণে মন খারাপ হওয়া, রাগ হওয়া ইত্যাদি। এ সময় ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগা উভয়ই তীব্র অনুভূত হয়।
- কখনও বিষণ্ণতা গ্রাস করতে পারে। তবে তা যদি ২ সপ্তাহের অধিক থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
এ সপ্তাহে করনীয়
গর্ভবতী হবার পর আপনি প্রথম বুঝতে পারবেন আপনার মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে, এতদিনে আপনার গর্ভাবস্থার ৫ সপ্তাহ হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে আপনি হয়ত প্রথম সন্দেহ করতে শুরু করবেন আপনি গর্ভবতী কি না। যদি এখনো নিশ্চিত না হয়ে থাকেন তাহলে এই সপ্তাহেই আপনি বাসায় প্রেগন্যান্সি টেষ্ট করতে পারেন কিংবা ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন। বাসায় পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কিট ( Pregnancy kit) পাওয়া যায়। তাহলে সুখবর জানতে দেরি কেন!
স্বাভাবিকভাবেই আপনার বমি বমি ভাব, ক্লান্তিবোধ, স্তনে অস্বস্তি এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসতে পারে। যদিও এই ব্যপারগুলো বিরক্তিকর, কিন্তু এসবই আপনার জন্য স্বাভাবিক। এগুলো কেবল গর্ভাবস্থারই একটি অংশ এবং সাময়িক।
- আপনি যদি আগে থেকেই কোন ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন তা গর্ভধারণের জন্য নিরাপদ কিনা।
- প্রতিদিন হালকা শরীরচর্চার অভ্যাস করুন।
- ফলিক এসিডসমৃদ্ধ প্রি-ন্যাটাল মাল্টিভিটামিন গ্রহন করুন।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন কারণ আপনি যা খাবেন তার প্রভাব আপনার গর্ভের সন্তানের উপর পড়বে।
- অধিক বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করুন।
তারপরও, গর্ভাবস্থার এমন কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো হেলা করা উচিত নয়। যদি সেসব বিপদজনক লক্ষণ আপনার মধ্যে টের পান, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। গর্ভাবস্থার প্রতিটা পর্যায়েই আপনাকে সঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করতে হবে, যাতে আপনার গর্ভস্থ শিশুটি প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি পায়। অল্প করে হলেও নিয়মমাফিক খাওয়া দাওয়া করুন ও প্রয়োজনীয় পানি পান করুন। এতে করে আপনার হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করবে এবং বমি ভাব ও ক্লান্তি বোধও অনেকাংশে দূর হবে।
আপনি চাকরিজীবী হলে মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে ভাবতে শুরু করুন এবং জেনে নিন আপনি কখন এবং ঠিক কতদিনের ছুটি পাবেন। আপনার বয়স যদি ৩৫ এর অধিক হয়ে থাকে, কিংবা আপনি যদি কোন জেনেটিক সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনি এ সংক্রান্ত পরীক্ষার ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন। Nuchal Fold Test কিংবা CVS Test এ রকম দুটো টেস্ট যার মাধ্যমে গর্ভের বাচ্চার কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং সেটা যত আগে করানো হয় ততই মঙ্গল।