সপ্তাহ – ৮

গর্ভাবস্থার এ সপ্তাহটি হল বৃদ্ধির জন্য একটি বড় সময় । আপনার শিশুর নেত্রপল্লবের ভাঁজ ও কানের গঠন শুরু হয়ে গেছে। হাত এবং পায়ের ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল যা এখন হাঁসের পায়ের মতো দেখতে, সেগুলির বিকাশ হচ্ছে এবং সে আপনার গর্ভে সাঁতারও কাটতে শুরু করেছে। আপনি বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করবেন না কিন্তু এখন থেকেই বাচ্চা হাত ও পা নড়াচড়া করা শুরু করে। বদ হজম বা বুক জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে। একবারে অনেক খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

সপ্তাহে শিশু কেমন হয়? 

এসময় শিশুর আকার একটি বরই এর সমান হয় (৩০ মি.মি. বা পুরো এক ইঞ্চি) এবং প্রতিদিন প্রায় এক মি.মি. হারে এর আকার বাড়ছে। এর মধ্যে পেছনের লেজের মত অংশটি প্রায় মিলিয়ে গেছে এবং তার মধ্যে মানুষের মত কিছু চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। আপনি কিছু টের না পেলেও, ছোট বাচ্চাটি কিন্তু এর মধ্যেই হাত ও পায়ের আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে শুরু করেছে।

এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন

  • আগের সপ্তাহগুলোর চাইতে বেশী বমিবমি ভাব, গন্ধ সংবেদনশীলতা এবং মেজাজের উঠানামা হতে পারে। শরীরের হরমোনাল পরিবর্তনের কারনেই এমন হয়ে থাকে। স্তন আগের চাইতে বেশী sensitive হয়ে উঠতে পারে। এবং আকার বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • তলপেটে মাংসপেশিতে খিঁচুনীর অনুভূতি হতে পারে, আপনার পেশি আপনা থেকে শক্তি বাড়াচ্ছে বলেই এমন অনূভুতি হবে। ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে যোনিপথে সামান্য রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। রক্তক্ষরণ বেশী হলে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম, ক্ষুদা এবং গরম লাগলে মাথা ব্যথা হতে পারে৷ একারণে পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত৷
  • রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দুপুরে ঘুমিয়ে তা পুষিয়ে নিন। এসময় ক্লান্ত বোধ করাই স্বাভাবিক এবং এটা মেনে নেয়াই ভাল। রাতের দুঃস্বপ্ন আরো ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে, আর আপনার মেজাজও খিটিখিটে হতে যেতে পারে।

এই সপ্তাহে যা ঘটে:

যদি আপনার বমি বমি ভাব (মর্নিং সিকনেস) শুরু হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেটি সম্ভবত গর্ভধারণের জন্যই হচ্ছে। যদিও গবেষকরা এর সঠিক কারণ এখনও জানেন না, তবে এটা নিশ্চিত যে এই উপসর্গ আপনার উদ্বেলিত হরমোনের কারণেই হচ্ছে।

এই পর্যায়ে, আপনার শ্রোণীচক্রের দুপাশে তীব্র ব্যথা হওয়াটা একটি সাধারণ ব্যাপার; বিশেষত আপনি যখন বাঁকছেন বা কিছুক্ষণের জন্য বসার পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

যেহেতু আপনার জরায়ু ভারী হয়ে উঠছে, তাই আপনার বৃত্তাকার সন্ধিবন্ধনী, যা এমন পেশী যেগুলি আপনার জরায়ুকে তার নিজের জায়গায় ধরে রাখে, তার উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই সময়ে গোলাপী বা খয়েরী স্রাব হওয়া বিরল নয় । কিন্তু যদি রক্ত উজ্জ্বল লাল, ভারী, বা জমাট বাঁধা হয় তাহলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসককে জানান ।

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়া, বিশেষতঃ প্রথম তিনমাসের মধ্য, একটি মোটামুটি প্রচলিত ব্যাপার । বস্তুত, গর্ভাবস্থার প্রথম ১৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ২৫% নারী হাল্কা স্পটিং বা ভারী রক্তক্ষরণ অনুভব করেন এবং তাঁদের মধ্যে অর্ধেক বেশী মহিলা পুরোপুরি সুস্থ শিশু জন্ম দিতে সক্ষম হন ।

এই সপ্তাহে আপনার জন্য পরামর্শ:

পরিমাণ মতো পানি খাওয়ার ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনার শিশু যাতে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে তার জন্য সমস্ত খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। সঙ্গীত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে, প্রতিদিন এমন গান শুনুন যা আপনার মেজাজ উন্নমিত করতে সাহায্য করবে।

 

আপনার মন্তব্য