সপ্তাহ – ৯

এ সপ্তাহে বাইরে থেকে দেখে আপনার গর্ভাবস্থা বোঝা যাবার সম্ভাবনা কম, যদি না এটা আপনার প্রথম গর্ভধারণ হয়। তবে আপনার খুব ক্লান্ত এবং দুর্বল লাগতে পারে, কাজেই নিজের যত্ন নিন।

গর্ভকালীন হরমোন আরো অনেক ভাবেই আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। অনেক মহিলাই কষ্টকর মাথাব্যথা এবং পিঠের সমস্যায় ভোগেন।

৯ সপ্তাহে শিশু কেমন হয়? 

এই সপ্তাহ থেকে আপনার শরীরের ভ্রুনটি ধীরে ধীরে মানবশিশুর রুপ নিতে থাকে। ভ্রুন এর লেজটি এসময় মিলিয়ে যায়। এখন ফিটাসের আকার একটি জলপাইয়ের সমান এবং মাথা থেকে তলা পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ মি.মি. এবং ওজন প্রায় ২ গ্রাম। এসময় মুখমণ্ডল তৈরি হচ্ছে এবং খুব ছোট আকারে জিহ্বাটি আকৃতি লাভ করছে। কানগুলোর ভেতর এবং বাইরের আলাদা কাঠামো দেখা যাচ্ছে এবং অন্তঃকর্ণে যে বিশেষ তরল থাকে তা জমা হতে শুরু করেছে।

এই বিশেষ তরলটিই শারীরিক ভারসাম্যের বোধ তৈরি করে। এরমধ্যে চোখগুলো কিছুটা বড় হয়েছে এবং নিজস্ব বর্ণ ধারণ করেছে, কিন্তু ওগুলো এখনো বন্ধ।

যদিও ১৫ সপ্তাহের আগে আলট্রাসাউন্ড এ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব নয় কিন্তু এ সপ্তাহ থেকেই তার যৌনাঙ্গ রূপ নিতে থাকে। শিশুর গোড়ালি ও কব্জি এখন অনেকটাই বিকশিত। তার হাত ও পায়ের আঙ্গুল অনেকটাই পরিপূর্ণ।

এ সপ্তাহে শারীরিক পরিবর্তন:

Øআপনার শরীরের শিরা গুলা অপেক্ষাকৃত বেশী দৃশ্যমান হতে পারে বিশেষ করে স্তন এর আশেপাশে এবং পায়ে। বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকলে পায়ে ব্যাথা হতে পারে। বিস্রামের সময় পা উপরে তুলে রাখার চেষ্টা করুন।

ØNipple গাঁড় বর্ণ ধারন করতে পারে। nipple এর আশেপাশে ছোট ছোট ব্রন হতে পারে। এগুলো Montgomery’s Tubercles নামে পরিচিত এবং স্তনকে breast feeding এর জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে।

Øহরমোনের কারনে মুখেও ব্রন এর উপস্থিতি বাড়তে পারে। কিন্তু ব্রণে কিছু মাখার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কিছু কিছু ক্রীম গর্ভধারণের সময় ব্যাবহার না করায় ভাল।

Øসকালবেলা বা রাতে বমি ও মাথাব্যথার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।এই সময় মুড সুইং খুবই সাধারন ঘটনা।অল্প কিছুতেই উদ্বিগ্ন বা রেগে যেতে পারেন অথবা বিষন্নতায় ভুগতে পারেন।

Øঅনেক মা এসময় কিছুটা অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন এই ভেবে যে তার হয়ত গর্ভের শিশুর জন্য সঠিক ভাবে মাতৃত্ব জাগছে না। অনেকেই ভাবেন এটা হয়ত শিশু বুঝতে পারবে। ভয় পাবেন না, এটা স্বাভাবিক। গর্ভের শিশু কিছুই বুঝতে পারবেনা।

এই সপ্তাহে আপনার করনীয় কি?

শারীরিক ভাবে কর্মব্যস্ত থাকলে গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকবেন এবং শিশু জন্মের পরও তা আপনাকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে। তবে তা যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন এবং এ সময় শরীর চর্চার ক্ষেত্রে কোনটা করবেন আর কোনটা করবেন না তা জেনে নিন।

শান্ত থাকার চেষ্টা করুন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।এমন কিছু করুন যাতে আপনরে মন ভালো থাকবে এবং হাসি খুশী থাকুন।

যদিও এখনো শুরুর দিকের সময়, তবু আপনি কীভাবে বসছেন বা কী ধরনের কাজ করছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার শিশু সহজ প্রসবের উপযোগী অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে কি না। এখন থেকেই এ নিয়ে ভাবতে থাকুন যাতে করে আপনি ভাল অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন।

আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, ফলিক এসিড ও অয়রন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন।

গর্ভের শিশুর হাড় গঠনে এবং মায়ের হাড়ের ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম খুব জরুরি। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ে মাকে দৈনিক কমপক্ষে ১০০০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। ক্যালসিয়াম হাড় গঠন ছাড়াও মায়ের উচ্চ রক্ত চাপও প্রতিরোধ করে। ডিম,দুধ,মাছ,পালং শাক, বাদাম থেকে অনেক ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

আপনার মন্তব্য