আপনার বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি আপনার প্লেট থেকে খাবার খেতে আগ্রহী হবে এবং এ সময় আপনি তার খাবারের মধ্যে কিছু বৈচিত্র্য আনতে পারেন। মনে রাখবেন সব খাবার কিন্তু আপনার সন্তানের জন্য নিরাপদ না।
কোন খাবারে গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং কিছু খাবার আপনার শিশুর পক্ষে হজম সহজ নয়।
যে খাবারগুলি এড়িয়ে যাবেন জন্মের প্রথম ৬ মাস
বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ ব্যতীত সমস্ত খাবার এবং পানীয় নিষেধ। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (এএপি) আপনার বাচ্চাকে কেবল বুকের দুধ অথবা প্রথম ছয় মাসের জন্য ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়।
যে খাবারগুলি এড়িয়ে যাবেন: ৬ থেকে ১২ মাস
মধু: মধু মাঝে মধ্যে ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামে পরিচিত একটি জীবাণুর বীজ ধারণ করে। এটি বাচ্চাদের মধ্যে বিরল আকারে খাবারে বিষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার লক্ষণগুলি খাওয়ার পরে আট থেকে ছত্রিশ ঘন্টা পরে প্রকাশ পায়। মধু শিশুর উদীয়মান দাঁতগুলিকেও ক্ষতি করতে পারে, যার কারণে একটি শিশুকে মধু খাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আগে বিবেচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হল তার বয়স।
গরুর দুধ এবং সয়াদুধ: আপনার সন্তানের প্রথম জন্মদিন অবধি বুকের দুধ বা ফর্মুলার সাথে লেগে থাকুন। আপনার শিশু তার প্রথম বছরে গরুর দুধ এবং সয়া দুধের প্রোটিন হজম করতে পারে না এবং এই এসব দুধে খনিজগুলি এমন পরিমাণে থাকে যা তার কিডনিতে ক্ষতি করতে পারে।
যে সব খাবারে শিশুর শ্বাসরোধের ঝুঁকি থাকে:
![](https://www.babycenterbd.com/wp-content/uploads/2021/01/Harmful-Food-to-avoid-for-baby.jpg)
ছোট শিশুদের সবকিছু মুখে দেওয়ার অভ্যাস। একটু অসাবধান হলেই মুখে দেওয়া এই বস্তু শ্বাসনালিতে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা যত দ্রুত শনাক্ত করা যায় ততই মঙ্গল।
বড় আকারের কোন খাবার: বড় আকারের খাবার আপনার শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে। আপনি বড় খাবারগুলোকে ১/২ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ছোট টুকরো করুন।
উদাহরণস্বরূপ, আঙ্গুর, চেরি, টমেটো এবং স্ট্রবেরি জাতীয় ফল কিংবা মাংস, শাকসবজি এবং চিজ জাতিও খাবার গুলো ছোট ছোট করে কেটে নিন।
কাঁচা শাকসবজি: নরম রান্না করা শাকসবজি যেমন গাজর, সেলারি এবং ব্রোকলির মতো শাকসবজি পরিবেশন করার আগে ছোট টুকরো করে কাটুন।
বাদাম এবং বীজ: শিশুকে খাবার দেয়ার আগে তরমুজ, পীচ, বরই এবং চেরির মতো তাজা ফল থেকে বীজ এবং পিটগুলি বের করে নিন।আপনার শিশুকে বাদাম বা বীজ যেমন সূর্যমুখী বা কুমড়োর বীজ খাওয়াবেন না।এসব বীজ ছোট আকারের হওয়ায় সহজে শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে দম বন্ধ করতে পারে।
শক্ত বা কুঁচকানো খাবার: বাদাম, পপকর্ন এবং সমস্ত শক্ত চকলেট এড়িয়ে যান।
স্টিকি খাবার: চুইন গাম এবং স্টিকি খাবার যেমন জেলি, শুকনো ফল এবং মার্শমেলো আপনার শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে এবং দমবন্ধ হতে পারে।
বাদাম মাখন: চিনাবাদাম, মাখন, বাটার এবং অন্যান্য বাদাম শক্ত হয়ে আপনার শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে।রুটি বা ক্র্যাকারগুলিতে পাতলা বাদামের মাখন ছড়িয়ে দিন অথবা পানি বা আপেল সস দিয়ে পাতলা করুন।
শিশুর গলায় খাবার আটকে গেলে কী করবেন?
হঠাৎ যদি কোনো বাচ্চার কাশি শুরু হয় বা বিষম খেতে শুরু করে এবং যদি এমন হয় যে ঠিক তার আগেই বাচ্চা ছোট কোনো বস্তু নিয়ে খেলছিল তবে বুঝতে হবে গলায় কিছু আটকে গেছে।
এ ক্ষেত্রে বাচ্চার মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা বের হতে পারে। কাশি থাকলেও জ্বর, সর্দি থাকবে না। সন্দেহ হলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিশুর গলায় খাবার আটকে গেলে তৎক্ষণাৎ করণীয়:
♦ শ্বাসনালিতে কিছু ঢুকে গেলে শিশুর মুখ খুলে যদি জিনিসটি দেখতে পান, সাবধানতার সঙ্গে বের করে ফেলুন।
♦ তবে দেখা না গেলে খোঁচাখুঁচি করবেন না, এতে আটকে যাওয়া জিনিসটি আরও ভেতরে ঢুকে যেতে পারে। বাচ্চা যদি কাশতে থাকে তবে তাকে কাশতে দিন।
♦ এতে কাশির সঙ্গে আটকে যাওয়া জিনিসটি বের হয়ে আসতে পারে। যদি শ্বাসকষ্ট হয় তবে শিশুর পিঠ চাপড়ে দিন।
♦ বাচ্চার বয়স এক বছরের কম হলে আপনি টুল বা চেয়ারের ওপর বসে শিশুকে আপনার কোলের ওপর আড়াআড়িভাবে উপুড় করে শুইয়ে, মাথা ঝুলিয়ে দিন।
♦ এরপর শিশুর পিঠের মাঝখানে, একটু ওপরের দিকে আপনার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে জোরে জোরে পাঁচবার চাপড় দিন। কাজ না হলে আবার করতে পারেন।
♦ বয়স বেশি হলে শিশুর পেছনে হাঁটু মুড়ে বা সোজা হয়ে দাঁড়ান, শিশুর বগলের নিচ দিয়ে দুই হাত ঢুকিয়ে, জাপটে ধরার ভঙ্গিতে শিশুর পেটের ওপরের অংশ বরাবর আপনার হাত রাখুন।
♦ এরপর এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, শিশুর বুকের সামনে চওড়া হাড়ের নিচে, যেখানে দুই পাশের পাঁজরের শেষের হাড়টি মিলিত হয়েছে সে জায়গায় রাখুন।
♦ এবার অন্য হাত দিয়ে এই হাতটির কবজি চেপে ধরুন, দুই হাত দিয়ে ওপর এবং ভেতর দিক বরাবর শিশুর পেটে জোরে চাপ দিন। পরপর পাঁচবার চাপ দিন।
♦ এতে যদি কাজ না হয় কিংবা শিশুর যদি জ্ঞান না থাকে সে ক্ষেত্রে কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকুন।
♦ মুখ থেকে মুখে বা নাকে শ্বাস দিন এবং দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
সাবধানতা
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ছোট পুঁতি, মার্বেল, বোতাম, ফলের বিচি, ছোট পার্টসযুক্ত খেলনা শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত। শিশুদের খেলনা বা জামা কেনার সময়ও পুঁতি, ঘন্টিওলা না কেনাই ভালো।